সাভার বেদে পল্লীতে নির্মিত হচ্ছে হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়

সাভার বেদে পল্লীতে নির্মিত হচ্ছে হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়।। SAFESAVAR24

সাভার বেদে পল্লীতে নির্মিত হচ্ছে হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয়।।
রাজিব মাহমুদ (সাভার):-
হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয় তৈরির কাজ শুরু করা হয়েছে। জমি কিনে মাটি ভরাট করার কাজ চলছে। প্রায় ৪০শতাংশ জমির উপর প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মান কাজ করা হচ্ছে।
১১-২-১৭ তারিখ সকাল ১১টার সময়
হাবিবুর রহমান প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মানের জমি পরিদর্শনে আসেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর আইকন, সবার প্রিয় ব্যক্তিত্ব, জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএম অতিরিক্ত ডিআইজি সংস্থাপন বাংলাদেশ পুলিশ,পুলিশ হেডকোয়াটার্স, এবং  মোঃ কাইয়ুমুজ্জামান খাঁন, এ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম পশ্চিম), সিআইডি হেড কোয়ার্টার, মালিবাগ, ঢাকা,  এবং অকো-টেক্স গ্রুপের সম্মানিত চেয়ারম্যান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি আশরাফুল আজিম, সিনিয়ার সহকারী পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, সিনিয়ার সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার- মাহবুবুর রহমান, ঢাকা জেলা ডিবি উত্তর এর ওসি মো:সায়েদ , সাভার বেদে সম্প্রদায়ের প্রধান মো: রমজান সহ আরো অনেকে।
জনাব হাবিবুর রহমান স্যার জমির মূল্য ও বিদ্যালয় তৈরীর খরচ বহন করার দায়িত্ব নেন। এ যুগে এত বড় ত্যাগ শুধু মাত্র মহান মানুষরাই করতে পারেন। তিনি শুধু বেদেদের জন্য বিদ্যালয় নয় পাল্টে দিয়েছেন বেদে পল্লীর চেহারা। এক এক করে বলে শেষ হবে না এই মহান মানুষের কৃতিত্ব। এক কথায় সকল বেদে পরিবারের অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন হাবিবুর রহমান। বেদে পল্লীর মানুষরাও এখন পাল্টাতে শুরু করেছেন। এখন তারা সবার সাথে চলাফেরা করতে দ্বিধাবোধ করে না, তারা এখন নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেতন।
বেদেরা এখন স্বাবলম্বী, অনেকেই পুলিশে চাকুরী পেয়েছেন, অনেকে ড্রাইভিং শিখে চাকুরী করছেন, কেউ কেউ কম্পিউটারের প্রশিক্ষণ নিয়ে অফিসে চাকুরী করছেন, তারা এখন নিজেদের কে সমাজের কাছে অবহেলিত মনে করে না। আর এ অসাধ্য কাজটি করেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা তার নাম হাবিবুর রহমান।
থেমে গেছে নিজেদের মধ্যকার বিবাদ। বন্ধ হয়েছে বহুবিবাহ। জীবনমান বদলে যাওয়ায় ওই এলাকায় ঘরে ঘরে এখন কর্মক্ষম মানুষ। একসময়ের অলস মানুষগুলোর এখন কর্মব্যস্ত জীবন। যুগ যুগ ধরে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত বেদেপল্লীর চালচিত্র বদলে দেয়ার অসাধ্যকে সাধন করেছেন পুলিশের একজন কর্মকর্তা। তার নাম হাবিবুর রহমান
বাড়ি বাড়ি থেকে ডেকে পুলিশে চাকরি! মাইকিং করে চাকরি গ্রহণের আহবান! তাও আবার পুলিশে! কোন লেনদেন ছাড়া! অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়! বাড়ি বাড়ি থেকে ডেকে চাকরি দেয়া হয়েছে সমাজের প্রকৃত অবহেলিত ও দু:স্থ পরিবারের ‘যোগ্য’ সন্তানদের।
মাদক মিলতো হাত বাড়ালেই। এ অবস্থায় পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযানে নেমে এরসঙ্গে নারী-পুরুষের সম্পৃক্ততা পায়। অতিরিক্ত ডিআইজি (সংস্থাপন) হাবিবুর রহমান বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন। এরপর শুরু হয় ধারাবাহিক কর্মসূচি।
বেদে মেয়েরা গ্রামে গ্রামে গাওয়াল করে শিঙ্গা দিয়ে (পা হতে বিষাক্ত রক্ত রেব করে বাতের ব্যথা কমানোর একটি পদ্ধতি), দাঁতের পোকা বের করা, তাবিজ-কবজ বিক্রি ও জাদু দেখিয়ে সামান্য আয় রোজগার তা দিয়ে জীবন চলতো না। এই সুযোগে বেদে কন্যাদের অনেককেই ঠেলে দেওয়া হতো অন্ধকারের পথে। সেখানে আলো জ্বালিয়ে আমাদের জন্য কারখানা করে দিয়েছেন হাবিব স্যার। আমরা এখন কাজ শিখে শেলাইয়ের কাজ করছি। কেউবা ব্লক বাটিকের কাজ করে ভালো আয় রোজগার করছি। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি। উন্নত জীবনে পা রাখছি।বেদে নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করান। তাদের সেলাই করা কাপড় কিনতে এগিয়ে আসেন তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানের নাজনীন নামের একজন মালিক। তৈরি পোশাক বিক্রির জন্য আশুলিয়ার জামগড়া ফ্যান্টাসি কিংডম এর সামনে একটি শো-রুম তৈরি করে দেয়া হয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘উত্তরন বুটিকস্’।
হাবিবুর রহমান জানান, বেদে পাড়ার সবাই আমার স্বজন। বেদে কন্যারা আমার মেয়ে।
বেকার যুবকের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। উত্তরার ব্র্যাক ড্রাইভিং স্কুলে প্রতিটি ব্যাচকে দুই মাস করে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ব্র্যাকের প্রশিক্ষকরা। প্রশিক্ষণ শেষে লাইসেন্সের ব্যবস্থা করে দেবে ব্র্যাক। এ বাবদ প্রশিক্ষণার্থীদের কোন খরচ বহন করতে হবে না।
পুলিশ চাইলে বদলে দিতে পারে গোটা সমাজ ব্যবস্থা। হাবিবুর রহমানের বদৌলতে সাভার বেদে পল্লী এর উদাহরণ হয়ে থাকবে।
ভালবাসা দিয়ে তাদের মনজয় করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে কাজ করে সাড়া মিলেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে একটি সমাজ। তিনি বলেন, পৈত্রিক পেশাকে ঘৃণা করে নয়, বরং সময়ের প্রয়োজনে সমাজে সম্মানের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহের জন্যই বেদেরা বিকল্প পেশায়
হাবিবুর রহমান বলেন, ইচ্ছা আছে পর্যায়ক্রমে বেদে সমাজের জন্যও এরকম উন্নয়নমূলক কাজ করার।
পোড়াবাড়ি সমাজ কল্যাণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক রমজান আহমেদ জানান, বেদে পাড়া বলে পরিচিত অমরপুর, পোড়াবাড়ি, কাঞ্চনপুর ও বক্তারপুর মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে সমস্যার গভীরে যান হাবিব স্যার। মাদকের অন্ধকার থেকে এখানকার মানুষদের আলোর পথে আনতে তাদের নানা প্রতিষ্ঠানে চাকরির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি কুয়েতের একটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় মাদকাসক্ত ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের মাঝে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হয় সেলাই যন্ত্র। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহায়তায় তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা শেষে পরে সেখানে খোলা হয় তৈরি পোশাক কারখানা। উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্যও খোলা হয় বিক্রয় কেন্দ্র। এভাবেই নারীদের সচেতন ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করে বাসিন্দাদের জীবন মান উন্নত করেন হাবিবুর রহমান।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *