নতুন শিক্ষাক্রমের চূড়ান্ত অনুমোদন

প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সরকার যে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে তার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরির জন্য গঠিত আলাদা কমিটির যৌথ সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।

সোমবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এনসিসিসির সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘যৌথ সভায় (প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি কমিটি) নতুন শিক্ষাক্রমের খসড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। এখন এটি বাস্তবায়নে আর কোনো বাধা নেই। আগামী বছর থেকে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে মাধ্যমিকের পাইলটিং ক্লাস চলছে। প্রাথমিকেও খুব শিগগিরই পাইলটিং শুরু হবে।’

মশিউজ্জামান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাক্রমে ভাষাগত কয়েকটি বিষয় ছাড়া তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। কমিটি অনুমোদন দেয়ায় সেটিকে চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

জানা যায়, মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ শ্রেণির সারাদেশে ৬১টি স্কুল, কারিগরি ও মাদ্রাসায় পাইলটিং শুরু হয়েছে। সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলটিং ক্লাস ভালোভাবে চলছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পক্ষ থেকে জানানো হয়।

নতুন কারিকুলামে কোনো পরিমার্জন বা পরিবর্তন প্রয়োজন আছে কি না সে বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী জানতে চাইলে কয়েকটি শব্দগত পরিবর্তন ছাড়া আর কোনো প্রস্তাব আসেনি বলে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণির আগে স্কুলে কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। পুরোটাই হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন। আর চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান- এই বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ, আর সামষ্টিক মূল্যায়ন (বার্ষিক পরীক্ষা) হবে ৪০ শতাংশ।

একইভাবে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানে শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ৬০ শতাংশ। বাকি বিষয়গুলোয় সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে ৪০ শতাংশ।

এ ছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতির মতো বাকি বিষয়গুলোর শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে ১০০ শতাংশ।

নবম ও দশম শ্রেণিতে গিয়ে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনকালীন মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ দশম শ্রেণির মোট ১০টি বিষয়ের মধ্যে পাঁচটির পরীক্ষা হবে এসএসসিতে। বাকি বিষয়গুলোয় ১০০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন।

বর্তমানে নবম ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হয়। এখন গড়ে ৩২ কর্মদিবস লাগে এসএসসি পরীক্ষা নিতে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে পাঁচ কর্মদিবসেই পরীক্ষা নেয়া শেষ হবে।

শিক্ষাক্রমের রূপরেখা অনুযায়ী, একাদশ ও দ্বাদশে আবশ্যিক বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন ৩০ শতাংশ আর সামষ্টিক মূল্যায়ন ৭০ শতাংশ। প্রায়োগিক বা ঐচ্ছিক বিষয়গুলোয় শিখনকালীন মূল্যায়ন ১০০ শতাংশ। এই দুই শ্রেণিতে সামষ্টিক মূল্যায়নের পাশাপাশি প্রকল্প ও ব্যবহারিক ভিত্তিতেও শিখনকালীন মূল্যায়নের সুযোগ থাকবে।

উচ্চ মাধ্যমিকে (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ছয়টি বিষয়ে ১২টি পত্র থাকবে। একাদশ শ্রেণিতে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে বাংলা, ইংরেজি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী যে শাখায় পড়বে, সেই শাখার প্রতিটি বিষয়ের প্রথম পত্রের (মোট তিনটি) পরীক্ষা হবে। অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে মোট ছয়টি বিষয়ে পাবলিক পরীক্ষা হবে।

আর দ্বাদশ শ্রেণিতে নিজ নিজ শাখার তিনটি বিষয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পত্রের মোট ছয়টি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সম্মিলিত ফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানসহ আরও অনেকে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *